বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস : আইনের বাস্তবায়ন নিম্নমুখী 

বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব দিবস আজ। কিন্ত দেশে মেধাসম্পদের কপিরাইট পরিস্থিতির খুব একটা সন্তোষজনক উন্নতি হয়নি। আইনটি সম্পর্কে অনেকের ধারণা অস্পষ্ট থাকার কারণে তার বাস্তবিক প্রয়োগও সীমিত। এরফলে সৃষ্টিশীল মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন আইনি অধিকার থেকে। কিন্ত, বিশ্ব ডিজিটালাইজেশনের কারণে  মেধাসম্পদের কপিরাইট নিবন্ধনের আগ্রহ বাড়ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস : আইনের বাস্তবায়ন নিম্নমুখী 

বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব দিবস আজ। কিন্ত দেশে মেধাসম্পদের কপিরাইট পরিস্থিতির খুব একটা সন্তোষজনক উন্নতি হয়নি। আইনটি সম্পর্কে অনেকের ধারণা অস্পষ্ট থাকার কারণে তার বাস্তবিক প্রয়োগও সীমিত। এরফলে সৃষ্টিশীল মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন আইনি অধিকার থেকে। কিন্ত, বিশ্ব ডিজিটালাইজেশনের কারণে  মেধাসম্পদের কপিরাইট নিবন্ধনের আগ্রহ বাড়ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, নিবন্ধন আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সৃষ্টিশীল মানুষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজনের সৃষ্টি আরেকজনের নামে নিবন্ধনের ঘটনাও ঘটেছে। কেউ হয়তো তার সৃষ্টির কপিরাইট নিবন্ধন করেননি। কিন্তু ওই সৃষ্টির কপিরাইট চেয়ে অন্য কেউ আবেদন করে নিবন্ধন নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আসল মালিককে যেতে হয়েছে আইনি লড়াইয়ে। কেউ কেউ আইনি লড়াইয়ে জিতলেও অনেক সৃষ্টিশীল মানুষ তাদের অসচেতনতায় নিজ সৃষ্টিসম্ভারের ওপর অধিকার ও মালিকানা হারাচ্ছেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মেধাসম্পদের মালিকানা নিবন্ধনের লক্ষ্যে কপিরাইট অফিস ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা হয়ে কাজ শুরু করে ১৯৬৭ সালে। মেধাসম্পদ বিষয়ে কপিরাইট অফিসের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিতে বলা আছে, মেধাসম্পদ হচ্ছে মানুষের মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা থেকে যা সৃষ্টি হয়। কপিরাইট হলো এর আইনি স্বীকৃতি। কপিরাইট মূলত কোনো কিছু সৃষ্টির জন্য স্রষ্টাকে স্বত্ব দেওয়া এবং বিনা অনুমতিতে ওই সৃষ্টকর্মের যে কোনো ধরনের অনুলিপি বা অনুবাদ, পুনর্মুদ্রণ, বিক্রি, প্রচার নিবৃত্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা।

প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক কিংবা কপিরাইট আমাদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে এবং সৃষ্টিশীল মানুষজন ও বিজ্ঞানীদের কাজ কীভাবে আমাদের সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখছে, এসব বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে ওয়ার্ল্ড ইন্টালেকচুয়াল প্রোপার্টি অরগানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) সাধারণ পরিষদে এই দিবসটি উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিবসটি পালনের জন্য ২৬ এপ্রিল তারিখটি বেছে নেওয়া হয়, কারণ হলো, ১৯৭০ সালের এই দিনে ডব্লিউআইপিওর জন্ম হয়েছে। 

বাংলাদেশে বই থেকে শুরু করে শিল্পকর্ম, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, রেকর্ড, কম্পিউটার, সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপস, কম্পিউটার গেম, উদ্ভাবনসহ সৃজনশীল মেধাসম্পদের কপিরাইট নিবন্ধন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে পাঁচশ। ২০১৭ সাল পর্যন্ত মেধাসম্পদের মালিকানা নিবন্ধন হয় মাত্র ১৫ হাজার ৩৮১টি। ২০১৮ সালে অনলাইনে নিবন্ধন শুরুর পর সৃষ্টিশীল মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। ফলে ওই বছর নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৯৫টি। ২০১৯ সালে ৩ হাজার ২০৫ এবং ২০২০ সালে ৩ হাজার ৬২১টি মেধাসম্পদের কপিরাইট নিবন্ধন হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনেও রয়েছে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের অধীনে ডিজাইন, লোগোসহ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনগুলো নিবন্ধন করা হয়। প্রতিটির জন্য রয়েছে আলাদা আইন।

এমন এক সময় দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। মেধাসম্পদ চুরির অভিযোগ আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের কারণে এখন অনেক কিছুই সহজে পাওয়া যায়। চাইলেই যে কেউ অন্যের লেখাসহ নানা সৃষ্টিকর্ম সহজে ব্যবহার করতে পারেন। তবে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া কিংবা স্বত্ব স্বীকার না করে ব্যবহার আইনত অবৈধ। এ জন্য চলচ্চিত্র বাদে চারটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল ও দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড। তবে সেটি তখনই কেউ দাবি করতে পারবেন, যখন তার নামে চিত্রনাট্য নিবন্ধন করা থাকবে। কোনো ব্যক্তি আজীবন তার সৃষ্টিকর্মের কপিরাইটের অধিকারী। তার মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত উত্তরাধিকাররা কপিরাইট ভোগ করবেন।

কপিরাইট নিবন্ধনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে উইমেন ইন আইপি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং কপিরাইট সমিতি (এলসিএসসিএফ) সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন  বলেন, মেধাস্বত্বের গুরুত্ব অপরিহার্য যখন অর্থনীতি বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ (পঞ্চাশ) বছর হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বপ্ন পাড়ি দিচ্ছে। যা অবশ্যই নতুন সৃষ্টির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।

বাংলাদেশ সংস্কৃতির দিক থেকে সমৃদ্ধ অনেক উন্নত যাহা ঐতিহ্যের মাধ্যমে প্রকাশিত বাংলার সাহিত্য, চিত্রকলা, সংগীত, সিনেমা, পোশাক এবং স্থাপত্য ইত্যাদির মাধ্যমে। এই সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য অন্য সকল জাতি থেকে অনেক আলাদা এবং সম্পূর্ণ তাই এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা করা আবশ্যক।